বাংলার রান্নাঘরে ঢেঁড়স এক জনপ্রিয় সবজি। গ্রীষ্মকালের এই সবজিটি অনেকের প্রিয়। ঢেঁড়সের ইংরেজি নাম Okra এবং এটিকে অনেকে ‘Lady’s Finger’ নামেও চেনে। ভাজি থেকে শুরু করে ঝোল, মশলা, কষা— ঢেঁড়সের রেসিপি প্রতিদিনের রান্নায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। শুধু সুস্বাদুই নয়, ঢেঁড়সে রয়েছে ভরপুর পুষ্টিগুণ, যা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব—
- ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
- জনপ্রিয় ঢেঁড়স রেসিপি (ভাজি, ঝোল, ভর্তা, দই-ঢেঁড়স ইত্যাদি)
- রান্নার সহজ টিপস
- FAQ (সাধারণ প্রশ্নোত্তর)
ঢেঁড়সের উপকারিতা
ঢেঁড়স শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং স্বাস্থ্যকরও। এর ভেতরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশ।
✅ ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
✅ লো ক্যালোরি ফুড – যারা ডায়েট কন্ট্রোল করেন তাদের জন্য আদর্শ।
✅ রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক – ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
✅ আঁশে ভরপুর – হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
✅ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম – হাড় মজবুত রাখে।
জনপ্রিয় ঢেঁড়স রেসিপি
১. ঢেঁড়স ভাজি
সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় রেসিপি হলো ভাজি।
উপকরণ:
- ঢেঁড়স – ২৫০ গ্রাম
- পেঁয়াজ – ১টি কুচি
- কাঁচা লঙ্কা – ২টি
- হলুদ গুঁড়ো – আধা চা চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
ঢেঁড়স ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। লম্বা করে কেটে কড়াইতে তেল দিয়ে ফোড়ন দিন। পেঁয়াজ কুচি ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ভাজুন। তারপর ঢেঁড়স, হলুদ, লবণ দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে রান্না করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্বাদু ঢেঁড়স ভাজি তৈরি।
২. ঢেঁড়স ঝোল
ভাতের সাথে খাওয়ার জন্য একেবারে আদর্শ রেসিপি।
উপকরণ:
- ঢেঁড়স – ২০০ গ্রাম
- আলু – ২টি (কুচি করা)
- টমেটো – ১টি
- সরষে বাটা – ২ টেবিল চামচ
- কাঁচা লঙ্কা – ৩টি
- হলুদ গুঁড়ো – আধা চা চামচ
- লবণ ও তেল – প্রয়োজনমতো
প্রস্তুত প্রণালী:
কড়াইতে তেল গরম করে আলু ভেজে নিন। এবার ঢেঁড়স, টমেটো ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে দিন। সরষে বাটা, হলুদ, লবণ দিয়ে মিশিয়ে জল দিন। ঢেকে রেখে মাঝারি আঁচে ১০ মিনিট রান্না করলেই ঢেঁড়স ঝোল পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
৩. ঢেঁড়স ভর্তা
ভর্তা পছন্দ করেন যারা, তাদের জন্য এটি এক দারুণ পদ।
উপকরণ:
- ঢেঁড়স – ১৫০ গ্রাম
- সরষের তেল – ১ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ কুচি – ১টি
- শুকনো লঙ্কা ভাজা – ২টি
- লবণ – স্বাদমতো
প্রস্তুত প্রণালী:
ঢেঁড়স হালকা সেদ্ধ করে নিয়ে শুকনো কড়াইতে ভেজে নিন। এবার পেঁয়াজ কুচি, লবণ, ভাজা শুকনো লঙ্কা দিয়ে মেখে নিন। উপর থেকে সরষের তেল দিয়ে পরিবেশন করুন।
৪. দই-ঢেঁড়স
গ্রীষ্মকালে দই-ঢেঁড়স খেতে অনেকেই ভালোবাসেন।
উপকরণ:
- ঢেঁড়স – ২০০ গ্রাম
- টক দই – আধা কাপ
- কাঁচা লঙ্কা – ২টি
- সরষে বাটা – ১ টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- তেল – ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
ঢেঁড়স ভেজে আলাদা করে রাখুন। দইয়ের সাথে সরষে বাটা, লবণ, কাঁচা লঙ্কা মিশিয়ে নিন। এবার ঢেঁড়স মিশিয়ে পরিবেশন করুন। গরম ভাতের সাথে এই পদ একেবারে অসাধারণ লাগে।
৫. ঢেঁড়স চিংড়ি মশলা
নন-ভেজ প্রিয়দের জন্য একটি জমজমাট পদ।
উপকরণ:
- ঢেঁড়স – ২০০ গ্রাম
- চিংড়ি – ১৫০ গ্রাম
- পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ করে
- টমেটো – ১টি
- গরম মশলা – আধা চা চামচ
- লবণ, তেল – প্রয়োজনমতো
প্রস্তুত প্রণালী:
চিংড়ি ভেজে আলাদা রাখুন। ঢেঁড়স ভেজে নিন। কড়াইতে পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুন বাটা, টমেটো দিয়ে মশলা কষে নিন। এবার ঢেঁড়স ও চিংড়ি দিয়ে দিন। গরম মশলা ছড়িয়ে দিন। ভাত বা রুটি— দুইয়ের সাথেই জমবে।
ঢেঁড়স রান্নার টিপস
- ঢেঁড়স কাটার পর সঙ্গে সঙ্গে ভাজুন বা রান্না করুন, না হলে পিচ্ছিল হয়ে যায়।
- ঢেঁড়স ভাজার সময় লেবুর রস দিলে চটচটে ভাব কমে।
- লম্বা করে কাটা ঢেঁড়স ভাজি ও কুচি করা ঢেঁড়স ঝোলে ভালো লাগে।
- সরষে বাটা বা নারকেলের দুধে ঢেঁড়স রান্না করলে স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
FAQ – ঢেঁড়স রেসিপি
প্রশ্ন ১: ঢেঁড়স রান্নার সময় চটচটে কেন হয়?
👉 ঢেঁড়সে প্রাকৃতিকভাবে ‘মিউসিলেজ’ নামে একটি পদার্থ থাকে। সঠিকভাবে শুকিয়ে বা ভেজে নিলে এই সমস্যা কম হয়।
প্রশ্ন ২: ডায়াবেটিস রোগীরা কি ঢেঁড়স খেতে পারেন?
👉 হ্যাঁ, ঢেঁড়স রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তাই নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন ৩: ঢেঁড়স কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
👉 অবশ্যই। ঢেঁড়সে ক্যালোরি কম ও আঁশ বেশি, যা হজম ভালো রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৪: ঢেঁড়স দিয়ে আর কী কী রেসিপি করা যায়?
👉 ঢেঁড়স দই, ঢেঁড়স চচ্চড়ি, ঢেঁড়স ডাল, ঢেঁড়স কষা ইত্যাদি অনেক ধরনের পদ বানানো যায়।
ঢেঁড়স শুধু একটি সাধারণ সবজি নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি ভাণ্ডার। ভাজি থেকে শুরু করে ঝোল, ভর্তা, কষা বা চিংড়ির সাথে রান্না— ঢেঁড়সের প্রতিটি রেসিপিই আলাদা স্বাদ নিয়ে আসে। প্রতিদিনের খাবারে ঢেঁড়স অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরও ভালো থাকবে, মনও ভরে যাবে সুস্বাদু রান্নার আনন্দে।