Hindu Mythology Asuras Story : দেবতাদের হার মানানো ১২ অসুর

Hindu Mythology Asuras Story: ভারতীয় পুরাণে দেবতা আর অসুরদের লড়াইয়ের গল্প অসংখ্যবার শোনা যায়। কিন্তু জানেন কি, এমন ১২ জন অসুর ছিলেন যারা শক্তিতে দেবতাদেরও হার মানিয়েছিলেন? কেউ তাঁদের পেয়েছিলেন বরদান, কেউ আবার নিজের তপস্যায় অর্জন করেছিলেন অসীম ক্ষমতা। আজ আমরা জানব সেইসব অসুরদের কাহিনি, যাঁরা স্বর্গ কাঁপিয়ে তুলেছিলেন, আর শেষে কেমন করে তাঁরা পরাজিত হলেন।

১. বজ্রঙ্গ ও তারকাসুরবজ্রঙ্গ ছিলেন দিতির তপস্যার ফল। তিনি জন্মেই এত শক্তিশালী হয়েছিলেন যে ইন্দ্রকে বন্দি করেছিলেন। দেবতাদের সমস্ত রাজ্য কেঁপে উঠেছিল তাঁর ভয়ে। কিন্তু তাঁর পুত্র তারকাসুর ছিলেন আরও ভয়ঙ্কর। তিনি ব্রহ্মার কাছে তপস্যা করে বর পান যে, তাঁকে কেবল শিবপুত্রই মারতে পারবে। দেবতারা তখন অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। কারণ, তখন শিব সন্ন্যাসে মগ্ন ছিলেন। মা পার্বতীর কঠোর তপস্যার ফলেই জন্ম নিলেন কার্তিকেয়। তিনিই যুদ্ধক্ষেত্রে তারকাসুরকে বধ করে দেবতাদের মুক্তি দেন।

২. মধু ও কৈটভপ্রাচীন কালে সমুদ্রের গভীর থেকে জন্ম নেয় এই দুই অসুর—মধু ও কৈটভ। তাঁরা বেদ চুরি করে ব্রহ্মাকে অসহায় করে ফেলেন। তারপর দেবতাদেরও পরাজিত করেন। বিষ্ণু তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু এই দুই অসুর প্রায় অজেয় ছিলেন। শেষে তাঁদেরই অহংকারে ফাঁদ পেতেছিলেন বিষ্ণু। বিষ্ণুর কাছে তাঁরা বর দিলেন—“যেভাবে তুমি চাও, আমরাই মরব।” তখন বিষ্ণু বললেন, “আমি এখনই তোমাদের হত্যা করব।” সুদর্শন চক্র দিয়ে তিনি তাঁদের দুই ভাইকে বধ করেন।

৩. মহিষাসুর‘মহিষ রূপী অসুর’ মহিষাসুরের কাহিনি সবচেয়ে পরিচিত। তিনি ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন যে কোনো পুরুষ তাঁকে বধ করতে পারবে না। এই বর নিয়ে তিনি দেবলোক আক্রমণ করেন। ইন্দ্র ও দেবতারা পরাজিত হয়ে স্বর্গ ছেড়ে পালান। তখন দেবতাদের শক্তি একত্র হয়ে সৃষ্টি হয় দেবী দুর্গা। দশভুজা দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে নয় রাত ধরে যুদ্ধ করেন। শেষে মহাশক্তি দুর্গা তাঁর ত্রিশূলে মহিষাসুরকে বধ করেন। আজও আমরা দুর্গাপুজো করি সেই বিজয়কে স্মরণ করে।

৪. শুম্ভ ও নিশুম্ভএই দুই অসুর ছিলেন দুই ভাই। তাঁরা শক্তিতে অতুলনীয় ছিলেন। ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন যে দেবতা, মানুষ বা অসুর কেউ তাঁদের মারতে পারবে না। একসময় তাঁরা দেবলোক দখল করে ফেলেন। দেবতারা সব হারিয়ে ফেলে মর্ত্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তখন দেবীরা একত্র হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। দেবী চণ্ডী ও কালী তাঁদের সেনাবাহিনী ধ্বংস করেন এবং মহাযুদ্ধে দুই ভাই শুম্ভ ও নিশুম্ভ নিহত হন।

৫. রক্তবীজরক্তবীজ ছিলেন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অসুরদের মধ্যে একজন। তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরলেই সেখান থেকে জন্ম নিত আরও হাজার হাজার রক্তবীজ। তাই তাঁকে যত আঘাত করা হত, তিনি ততই বাড়তে থাকতেন। দেবতারা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তখন দেবী কালী এগিয়ে আসেন। তিনি তাঁর বিশাল জিহ্বা বার করে রক্ত পান করতে থাকেন। একফোঁটা রক্তও মাটিতে পড়তে দেননি। এইভাবে রক্তবীজের মৃত্যু ঘটে।

৬. ভণ্ডাসুরভণ্ডাসুর ছিলেন দেবী ললিতার শত্রু। তিনি অসংখ্য অসুর সেনা নিয়ে দেবতাদের আক্রমণ করেন। দেবতারা একত্রিত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে টিকতে পারছিলেন না। শেষে দেবী ললিতা মহাশক্তি ধারণ করে বিশেষ অস্ত্র প্রয়োগ করেন। সেই অস্ত্রেই ভণ্ডাসুরের বধ ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে আবার শান্তি ফিরে আসে দেবলোক ও মর্ত্যে।

৭. বৃত্রাসুর ঋগ্বেদে বর্ণিতবৃত্রাসুর ছিলেন বিশাল দানব, যিনি পৃথিবীর সমস্ত জল নিজের দখলে নিয়েছিলেন। ইন্দ্র তাঁকে পরাজিত করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। অবশেষে ঋষি দধিচি নিজের অস্থি দান করেন। সেই অস্থি দিয়ে তৈরি হয় বজ্রায়ুধ। এই অস্ত্র দিয়ে ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে বধ করেন এবং পৃথিবীতে জল আবার প্রবাহিত হয়।

৮. বৃত্তাসুর এই অসুর শিবের কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন যে কাঠ বা লোহার কোনো অস্ত্র তাঁকে মারতে পারবে না। দেবতারা আবারও বিপদে পড়েন। তখন বিষ্ণু তাঁদের পথ দেখান। আবারও দধিচি ঋষির হাড় দিয়ে এক বিশেষ অস্ত্র তৈরি হয়। সেই অস্ত্রের আঘাতেই বৃত্তাসুরের মৃত্যু ঘটে।

৯. জলন্ধর শঙ্খচূড়জলন্ধর ছিলেন শিবের ক্রোধ থেকে জন্ম নেওয়া অসুর। তিনি এত শক্তিশালী ছিলেন যে দেবতাদের বারবার পরাজিত করতেন। তাঁর স্ত্রী বৃন্দার সতীত্ব তাঁকে অজেয় করে রেখেছিল। তাই দেবতারা কিছুই করতে পারছিলেন না। তখন বিষ্ণু এক কৌশল ব্যবহার করেন। বৃন্দার সতীত্ব ভঙ্গ হয়, আর জলন্ধর দুর্বল হয়ে পড়েন। সেই সুযোগে শিব ত্রিশূল দিয়ে জলন্ধরকে বধ করেন।

১০. রাবণ ও মেঘনাদলঙ্কার রাজা রাবণ ছিলেন দশমাথাওয়ালা অসুর। তিনি বহু বরলাভ করেছিলেন, ফলে দেবতারা তাঁকে কখনও পরাজিত করতে পারেননি। অহংকারে তিনি সীতাকে অপহরণ করেন। তখন বিষ্ণু মানব রূপে জন্ম নেন শ্রীরাম হিসাবে। মহাযুদ্ধে রাবণকে বধ করেন শ্রীরাম। রাবণের পুত্র মেঘনাদও ছিলেন অতিশয় শক্তিশালী যোদ্ধা। তিনি দেবতাদেরও বন্দি করেছিলেন। কিন্তু লক্ষ্মণের হাতে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

বন্ধুরা, এই ১২ জন অসুর দেবতাদের থেকেও শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু তাঁদের একটাই ভুল ছিল—অহংকার। সত্য আর ধর্মের কাছে তাঁদের শক্তি টিকতে পারেনি। এই কাহিনিগুলি আমাদের শেখায়—অন্যায় যত বড়ই হোক না কেন, ন্যায় সর্বদা বিজয়ী হয়।

১. অসুরদের শক্তি যতই বড় হোক না কেন, তাঁদের সর্বনাশ হয়েছে অহংকারে। অহংকার মানুষকে যেমন অন্ধ করে দেয়, তেমনই অসুরদেরও সর্বনাশ ডেকে এনেছে।

২. দেবতা আর অসুরের যুদ্ধ কেবল শক্তির সংঘর্ষ ছিল না, এটা ছিল ন্যায় আর অন্যায়ের পরীক্ষাও।

৩. বজ্রঙ্গের মতো শক্তিশালী অসুরও ইন্দ্রকে পরাজিত করেছিলেন, কিন্তু শাশ্বত নিয়ম অনুযায়ী, শক্তি যদি ধর্মের পথে না থাকে তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

৪. তারকাসুরের জন্মই ছিল দেবতাদের পরীক্ষা। শিবের সন্তান জন্ম না নিলে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে পারত না।

৫. ইতিহাস বারবার প্রমাণ করে, ন্যায়ের জন্য যদি সঠিক সময়ে সঠিক শক্তি জন্ম নেয়, তবে দুষ্ট শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব।

৬. মধু ও কৈটভের কাহিনি শেখায়, অহংকারে আসা আত্মবিশ্বাস অনেক সময় নিজের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৭. দেবতাদের শক্তি বারবার ক্ষীণ হয়ে পড়েছে অসুরদের কাছে, কিন্তু কৌশল আর ধৈর্যই তাঁদের রক্ষা করেছে।

৮. মহিষাসুরের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অসীম ক্ষমতা পেলেও যদি সেটা অন্যায়ে ব্যবহার হয়, তবে তার শেষ গতি ধ্বংস।

৯. দুর্গার আবির্ভাব শুধু দেবতাদের জয়ের প্রতীক নয়, নারীর শক্তিরও প্রতীক।

১০. শুম্ভ ও নিশুম্ভ দেখিয়েছিলেন কিভাবে দুই ভাই একসঙ্গে দেবতাদের পরাস্ত করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নারীর শক্তির সামনে তাঁদের পরাজয় নিশ্চিত হয়।

১১. রক্তবীজের কাহিনি শেখায়, সমস্যাকে সরাসরি আঘাত করলে অনেক সময় তা আরও বেড়ে যায়, বরং সঠিক উপায়ে মোকাবিলা করতে হয়।

১২. মা কালী যে কৌশলে রক্তবীজকে পরাস্ত করলেন, তা আমাদের বলে—জটিল সমস্যার সমাধান সবসময় প্রচলিত নিয়মে হয় না, প্রয়োজন হয় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।

১৩. ভণ্ডাসুরের অসংখ্য সৈন্য দেবতাদের দিশেহারা করেছিল, কিন্তু দেবী ললিতার একাগ্রতা শেষমেশ তাঁকে বধ করেছিল।

১৪. এটা প্রমাণ করে, যতই শত্রু সংখ্যায় বড় হোক, যদি নেতৃত্ব দৃঢ় হয় তবে জয় সম্ভব।

১৫. বৃত্রাসুর জল আটকে রেখেছিলেন, আর ইন্দ্রের কাছে মনে হয়েছিল তিনি অপরাজেয়। কিন্তু মানুষের আত্মত্যাগ (ঋষি দধিচির অস্থি) দেবতাদের বিজয় এনে দেয়।

১৬. এখানেই বোঝা যায়, বড় যুদ্ধে জয়লাভের জন্য অনেক সময় ত্যাগ অপরিহার্য।

১৭. বৃত্তাসুরের বর তাঁকে লোহার বা কাঠের অস্ত্রের কাছে অজেয় করেছিল। এটা মনে করিয়ে দেয়, প্রতিরক্ষা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সবসময় এক ফাঁক থেকে যায়।

১৮. জলন্ধরের শক্তি ছিল তাঁর স্ত্রীর সতীত্বে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, অনেক সময় ক্ষমতার আসল উৎস থাকে অন্য কারও ভেতর।

১৯. অসুরদের কাহিনিগুলো কেবল ভয়ের গল্প নয়, এগুলো জীবনদর্শনের প্রতিফলন।

২০. রাবণের দশ মাথা ছিল জ্ঞানের প্রতীক, কিন্তু অতিরিক্ত অহংকার সেই জ্ঞানকেও ধ্বংস করে দেয়।

২১. রাবণ সব জানতেন, এমনকি নিজের মৃত্যুর কথাও, তবুও লোভ আর আসক্তি তাঁকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়।

২২. মেঘনাদের শক্তি অসাধারণ ছিল, কিন্তু ভাগ্য ও সময় তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি।

২৩. এই কাহিনিগুলো আমাদের শেখায়, সময় যখন শেষ হয়, তখন সবচেয়ে বড় যোদ্ধাকেও বাঁচানো যায় না।

২৪. অসুররা সবসময় শক্তিশালী ছিলেন, কিন্তু দেবতাদের ছিল কৌশল, বুদ্ধি ও ধৈর্য।

২৫. আমাদের জীবনেও সমস্যা অনেক সময় অসুরের মতো বড় হয়ে ওঠে, কিন্তু বুদ্ধি আর সাহস দিয়ে তা জয় করা যায়।

২৬. প্রতিটি অসুরের কাহিনির মধ্যে একটা শিক্ষণীয় দিক রয়েছে।

২৭. তারকাসুর দেখিয়েছেন, এক ভুল বর পুরো স্বর্গকে বিপদে ফেলতে পারে।

২৮. রক্তবীজ দেখিয়েছেন, সমস্যা এড়ানো যায় না, তাকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়।

২৯. মহিষাসুর মনে করিয়ে দিয়েছেন, নারী শক্তিকে কখনও ছোট করে দেখা উচিত নয়।

৩০. জলন্ধর প্রমাণ করেছেন, সত্য ও সতীত্ব শক্তি দিলেও তা ভঙ্গ হলে পতন অনিবার্য।

৩১. রাবণের দশমাথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অতিরিক্ত জ্ঞান অহংকার তৈরি করে।

৩২. দেবী দুর্গার আবির্ভাব শেখায়, সম্মিলিত শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি।

৩৩. মা কালী শেখান, কখনও কখনও সমস্যাকে শিকড় থেকে নির্মূল করতে হয়।

৩৪. বৃত্রাসুরের কাহিনি বলে, প্রকৃতি যদি কারও হাতে বন্দি হয়, তবে মানবতার টিকে থাকা সম্ভব নয়।

৩৫. দধিচির অস্থিদান ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগের উদাহরণ।

৩৬. অসুরদের শক্তি অনেক সময় আশীর্বাদ থেকে এসেছে, কিন্তু সেই আশীর্বাদ তাঁদের অহংকারে পরিবর্তিত হয়েছে।

৩৭. দেবতারা যখনই দুর্বল হয়েছেন, তখনই নতুন দেবীর আবির্ভাব ঘটেছে।

৩৮. প্রতিটি অসুরই একেকটা পরীক্ষার প্রতীক, যা দেবতাদের শক্তি যাচাই করেছে।

৩৯. এই কাহিনিগুলি ছাড়া পুরাণ অসম্পূর্ণ।

৪০. মানুষের জীবনে এই গল্পগুলো প্রতীকী—অসুর মানে ভেতরের অহংকার, লোভ, আসক্তি।

৪১. দেবতা মানে অন্তরের জ্ঞান, ধৈর্য আর সৎ শক্তি।

৪২. যখন ভেতরের অসুর জেগে ওঠে, তখন জীবন অন্ধকারে ডুবে যায়।

৪৩. আবার ভেতরের দেবশক্তি জেগে উঠলে সব বাধা ভেঙে যায়।

৪৪. পুরাণ আমাদের শেখায়, যুদ্ধ সবসময় বাইরে হয় না, ভেতরেও হয়।

৪৫. অসুররা হেরে গিয়েছেন কারণ তাঁরা ভেতরের যুদ্ধ হেরে গিয়েছিলেন।

৪৬. ধর্ম জয়ী হয়েছে কারণ ভেতরের শক্তি দৃঢ় ছিল।

৪৭. অসুরদের কাহিনি আমাদের সতর্ক করে দেয়—অতিরিক্ত লোভ সর্বনাশ ডেকে আনে।

৪৮. তাঁদের পতন শেখায়—যে শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেটাই ধ্বংসের কারণ হয়।

৪৯. প্রতিটি যুদ্ধই ছিল আলোর সঙ্গে অন্ধকারের সংঘর্ষ।

৫০. আর প্রতিবারই প্রমাণিত হয়েছে—অন্ধকার যতই গভীর হোক, আলো আসবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *