Stock Market: শেয়ারবাজারে রেকর্ড উত্থান! জিএসটি সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আশাবাদে সেনসেক্স-নিফটির সেরা দিন

Stock Market Stock Market

Stock Market: ২০২৫ সালের ১৮ই আগস্ট ভারতীয় শেয়ারবাজারে দেখা গেল বিরল দৃশ্য। মাসের পর মাস স্থির গতিতে চলা বাজার হঠাৎ করেই রেকর্ড উত্থান করল। সেনসেক্স এক ঝটকায় প্রায় ১,০০০ পয়েন্ট ছুঁল, আর নিফটি ১%–এর বেশি বেড়ে গেল। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এটি ছিল গত তিন মাসের মধ্যে বাজারের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিন।

কিন্তু এই উত্থানের আসল কারণ কী? আসুন খুঁটিয়ে দেখি—

১. জিএসটি সংস্কারের ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের নতুন আশা দিল ( Stock Market )

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের জিএসটি ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেছেন। এই সংস্কার প্রস্তাবই বাজারকে সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা করেছে।

  • ছোট গাড়ি, বিশেষত পেট্রল ও ডিজেলচালিত মডেলের উপর জিএসটি হার ২৮% থেকে কমিয়ে ১৮% করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ফলে সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে গাড়ি আরও সাশ্রয়ী হবে।
  • বীমা প্রিমিয়ামের উপর বর্তমানে ১৮% কর বসে, সেটি কমিয়ে ৫% অথবা একেবারেই শূন্য করার পরিকল্পনা রয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক ব্রোকারেজ সংস্থা জেফারিজ ও মর্গ্যান স্ট্যানলির মতে, এই সংস্কার বাস্তবায়িত হলে প্রায় ২.৪ লক্ষ কোটি টাকার সমান চাহিদা বাড়বে। এর ফলে জিডিপি বৃদ্ধির হারও ৫০ থেকে ৭০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে

এমন প্রস্তাব স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

২. এসঅ্যান্ডপি-র রেটিং আপগ্রেডে অর্থনীতির প্রতি আস্থা Stock Market

শুধু জিএসটি নয়, আরেকটি বড় কারণ ছিল এসঅ্যান্ডপি-র সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং উন্নতি। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর ভারতের রেটিং “BBB-” থেকে “BBB” তে উন্নীত করা হয়েছে। এর মানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিকে আরও বেশি করে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।

এই সংবাদে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন এবং ভারতীয় বাজারে নতুন করে অর্থ ঢালতে শুরু করেছেন।

৩. অটো ও কনজিউমার সেক্টরে ঝড়

জিএসটি কমার খবর পাওয়া মাত্রই অটোমোবাইল শেয়ারগুলোতে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।

  • মারুতি সুজুকি ও হুন্ডাই–এর মতো শীর্ষ কোম্পানির শেয়ার এক লাফে ৮–৯% বেড়ে যায়।
  • অটো ইনডেক্স প্রায় ৫% বৃদ্ধি পেয়ে গত ১০ মাসের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে
  • শুধু গাড়ি নয়, ভোক্তা সামগ্রীর ক্ষেত্রেও উত্থান চোখে পড়েছে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, নেসলে ইন্ডিয়া, ডাবর–এর মতো FMCG কোম্পানির শেয়ার ৪–৭% পর্যন্ত বেড়েছে।

ফলে নিফটির FMCG ইনডেক্সও প্রায় ১.৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে জোয়ার

জিএসটি সংস্কার ও রেটিং আপগ্রেডের যুগলবন্দিতে আর্থিক খাতেও গতি এসেছে। বাজাজ ফাইন্যান্স ও বাজাজ হাউসিং ফাইন্যান্স–এর শেয়ার একদিনে প্রায় ৭% পর্যন্ত বেড়ে যায়। ব্যাংকিং ও NBFC খাতও এর সুফল পেয়েছে।

৫. সেনসেক্স ও নিফটির রেকর্ড বৃদ্ধি

  • দুপুর নাগাদ সেনসেক্স প্রায় ৮৪৩ পয়েন্ট (১.০৫%) বেড়েছিল, আর নিফটি বেড়েছিল ২৯০ পয়েন্ট (১.১৮%)।
  • দিনের শেষে সেনসেক্স বন্ধ হয়েছে ৮১,২৭৩ পয়েন্টে, অর্থাৎ প্রায় ৬৭৬ পয়েন্ট (০.৮৪%) বৃদ্ধি
  • নিফটি শেষ হয়েছে ২৪,৮৭৬.৯৫ পয়েন্টে, যা প্রায় দু’মাস পরে সূচকের ১%–এর বেশি উত্থান।

এটি প্রমাণ করে যে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন পর প্রকৃতপক্ষে আশাবাদী হয়ে বাজারে ফিরছেন।

কেন এই উত্থান এতটা গুরুত্বপূর্ণ?

১. ভোক্তাদের স্বস্তি – গাড়ি ও বীমার মতো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কর কমলে ক্রেতাদের খরচ কমবে, যা সরাসরি বাজারের চাহিদা বাড়াবে।

২. অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নতি – জিএসটি সংস্কার শুধু অটো বা বীমা নয়, সিমেন্ট, টেকসই পণ্য, আর্থিক খাত সহ নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সিমেন্ট শিল্পের ক্ষেত্রেই প্রায় ২০,০০০–২৫,০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যবসা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৩. উৎসবের মরশুমে কৌশলগত পদক্ষেপ – দীপাবলির আগে এই সংস্কার কার্যকর হলে উৎসবের কেনাকাটায় বড়সড় উত্থান আসবে।

৪. বিনিয়োগকারীর মনোভাব – সার্বভৌম রেটিং বাড়া এবং কর কমার প্রতিশ্রুতি বাজারে এক নতুন আস্থা তৈরি করেছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনাও প্রবল।

সামনে কী হতে পারে?

  • জিএসটি কাউন্সিলের অনুমোদন – এই প্রস্তাব এখনো চূড়ান্ত নয়। কাউন্সিল অনুমোদন দিলে দীপাবলির আগেই কার্যকর হতে পারে।
  • রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা – কর কমানোয় সরকারের আয় কিছুটা কমতে পারে। তাই রাজস্ব ও ব্যয়ের ভারসাম্য রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
  • বিনিয়োগের ফোকাস পরিবর্তন – পুঁজিভিত্তিক খাতের বদলে ভোক্তাচালিত খাতগুলো এখন বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ হতে পারে।

আজকের বাজারের উত্থান শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং এটি এক আস্থার বার্তা। কর সংস্কার ও রেটিং আপগ্রেড মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন ভারতীয় অর্থনীতি নতুন এক গতি পেতে চলেছে। যদি এই জিএসটি সংস্কার যথাযথভাবে কার্যকর হয়, তবে আসন্ন মাসগুলোতে শেয়ারবাজারে আরও ইতিবাচক ধারা দেখা যেতে পারে।

ভারতীয় বাজারের এই সাফল্য স্পষ্ট করে দিল—যখন নীতি সঠিক ও সময়োপযোগী হয়, তখন তার প্রভাব সরাসরি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী—সবাই অনুভব করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *