The Bengal Files review: দ্য বেঙ্গল ফাইলস রিভিউ – ইতিহাস, রাজনীতি ও আবেগের নির্মম মিশ্রণ

The Bengal Files review The Bengal Files review

ভারতীয় সিনেমা বরাবরই ইতিহাসকে বিভিন্নভাবে পর্দায় তুলে ধরেছে। Partition, Direct Action Day, Noakhali Riot-এর মতো ঘটনাগুলি হয়তো বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থেকেছে, কিন্তু সেগুলোকে বড়পর্দায় রক্তমাংসে দেখানোর সাহস খুব কম পরিচালকই দেখিয়েছেন। সেই সাহস দেখিয়েছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী (Vivek Agnihotri)

তাঁর আগের ছবি The Kashmir Files দর্শকদের মনে আলোড়ন তুলেছিল। অনেকেই ছবিকে প্রশংসা করেছিলেন, আবার অনেকেই তীব্র সমালোচনাও করেছিলেন। এবারে তিনি হাজির হয়েছেন “The Bengal Files” নিয়ে—যা বাংলার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়কে নগ্নভাবে সামনে আনে।

গল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ The Bengal Files review দ্য বেঙ্গল ফাইলস রিভিউ

গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ১৯৪৬ সালের Direct Action Day এবং তার পরবর্তী ভয়াবহ দাঙ্গা। ছবির শুরু হয় বর্তমান সময় থেকে, যেখানে একজন পুলিশ অফিসার শিব পণ্ডিত (অভিনয়ে দর্শন কুমার) এক জটিল মামলায় তদন্ত চালাচ্ছেন। সেই তদন্ত তাঁকে নিয়ে যায় বাংলার অতীত ইতিহাসে, যেখানে তিনি খুঁজে পান দাঙ্গার শিকার অসংখ্য পরিবার, তাদের কষ্ট, এবং সেই কষ্টের উত্তরাধিকার।

ছবির বড় অংশ জুড়ে আছে Noakhali Riot এবং সেই সময়কার সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা। হিন্দু-মুসলিম বিভাজন, রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই, এবং সাধারণ মানুষের অসহায়তা এখানে নির্মমভাবে ফুটে উঠেছে।

পরিচালনা ও নির্মাণ শৈলী The Bengal Files review

বিবেক অগ্নিহোত্রী বরাবরই তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বার্তা দিতে ভালোবাসেন। এখানেও তিনি কোনো কিছু আড়াল করেননি।

  • সিনেমাটোগ্রাফি শক্তিশালী, বিশেষ করে দাঙ্গার দৃশ্যগুলোতে রঙ, আলো আর কনট্রাস্ট ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর।
  • ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও আবেগকে তীব্র করে তোলে, দর্শককে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেয়।
  • তবে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে ছবির দৈর্ঘ্য। প্রায় ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট দীর্ঘ হওয়ায় অনেক দর্শকের কাছে এটি ক্লান্তিকর মনে হতে পারে।

অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয়

দর্শন কুমার

পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় তিনি যথার্থ ছিলেন। একদিকে আইন ও শৃঙ্খলার প্রতি দায়বদ্ধতা, অন্যদিকে সত্য ও ন্যায়ের খোঁজ—এই দ্বন্দ্ব দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে পৌঁছে গেছে।

পল্লবী জোশি

একজন প্রবীণ বাঙালি নারীর ভূমিকায় তাঁর অভিনয় হৃদয়বিদারক। বিশেষ করে স্মৃতিশক্তি হারানোর দৃশ্যগুলোতে তিনি এক অনবদ্য আবেগের সঞ্চার করেছেন।

সসওয়াতা চট্টোপাধ্যায়

তিনি ছবির অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র। ঠাণ্ডা মাথায় ভয়ঙ্কর কাজ সম্পাদন করা তাঁর চরিত্র দর্শকের মনে দাগ কাটে।

নামশি চক্রবর্তী

১৯৪৬ সালের গুলাম চরিত্রে তাঁর নিষ্ঠুরতা এবং ভয়ের উপস্থিতি ছবিকে আরও বাস্তব করে তুলেছে।

অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তী, রাজেশ খেরা প্রমুখ

তাঁরা প্রত্যেকেই তাদের চরিত্রে যথাযথ ছিলেন। বিশেষত মিঠুন চক্রবর্তীর সংলাপ উচ্চারণ এখনও দর্শকদের কানে বাজে।

থিম ও মূল বার্তা

ছবিটি শুধু দাঙ্গার গল্প নয়, বরং এটি মানবতার গল্প।

  • ধর্মের বিভাজন কিভাবে সাধারণ মানুষকে ধ্বংস করে, তা স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে।
  • রাজনৈতিক লড়াই, ক্ষমতার লোভ, এবং সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ছবির প্রতিটি দৃশ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
  • বার্তাটি স্পষ্ট—ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে, ভবিষ্যতও রক্তাক্ত হয়ে উঠতে পারে।

বিতর্ক ও সমালোচনা

ছবিটি মুক্তির পর থেকেই বিতর্কে ঘেরা।

  • গোপাল পাত্থাকে ‘মুসলিম-ঘৃণাভাজন কসাই’ হিসেবে দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর উত্তরসূরীরা পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
  • অনেক সমালোচক মনে করেন, ছবিটি ইতিহাসকে নিরপেক্ষভাবে না দেখিয়ে একতরফাভাবে উপস্থাপন করেছে।
  • কেউ কেউ আবার বলেন, এটি শুধুই রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা।

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া

  • India Today: ছবিটি নির্মম, তীব্র ও আবেগঘন, তবে অতিরিক্ত দীর্ঘ এবং কাঠামোতে দুর্বল। (রেটিং: ৩/৫)
  • Times of India: ছবিটি ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়কে বাস্তবভাবে তুলে ধরেছে। (রেটিং: ৩.৫/৫)
  • Indian Express: ছবিটি অগোছালো, দীর্ঘ এবং অনেক সময় বিভ্রান্তিকর। (রেটিং: ১.৫/৫)
  • CNN-News18: ছবিটিকে গড়পড়তা বলেছে। (রেটিং: ২/৫)

আমাদের মতে, “The Bengal Files” কোনো সাধারণ বিনোদনমূলক সিনেমা নয়, বরং ইতিহাসের এক নির্মম আয়না।

  • ইতিহাসের শিক্ষা: যারা অতীতের এই অধ্যায় জানেন না, তাদের জন্য ছবিটি অনেক নতুন তথ্য উন্মোচন করে। দা*ঙ্গা, বিভাজন আর রাজনীতির অমানবিকতা কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনকে ধ্বংস করেছিল—তা এখানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
  • শক্তি: ছবির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর অভিনয়শিল্পীদের অসাধারণ পারফরম্যান্স। দর্শন কুমার, পল্লবী জোশি, নামশি চক্রবর্তী ও সসওয়াতা চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রগুলো দর্শকদের মনে গভীর দাগ কাটবে। তাছাড়া সিনেমাটোগ্রাফি ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পুরো আবহকে আরও বাস্তব করে তুলেছে।
  • দুর্বলতা: ছবির দৈর্ঘ্য অস্বাভাবিকভাবে বেশি হওয়ায় অনেক জায়গায় গতি হারিয়েছে। এছাড়া কিছু দৃশ্য ও সংলাপে একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়, যা নিরপেক্ষ দর্শকদের কাছে প্রশ্ন তুলতে পারে।
  • প্রভাব: এই ছবিটি দর্শককে আনন্দ দেবে না, বরং অস্বস্তিতে ফেলবে, কাঁপিয়ে তুলবে। কিন্তু হয়তো সেটাই নির্মাতার উদ্দেশ্য—যাতে দর্শকরা শুধু বিনোদন না পেয়ে ইতিহাসের ভয়াবহতাকে অনুভব করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *